1. admin@newsbayanno24.com : admin :
  2. newsbayanno24@gmail.com : newsbayanno24 : নিউজ বায়ান্ন ২৪ ডটকম
বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
লৌহজং প্রেস ক্লাবের ৩য় বর্ষ পূর্তিতে নানান আয়োজন পদ্মা সেতুর টোল আদায় এক হাজার কোটি টাকা ছাড়াল লৌহজংয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল ফাইনাল মৌলভীবাজারে চার দফা দাবিতে ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের মানববন্ধন বাউফলে চাচার হাতে ভাতিজা খুন, আসামী গ্রেপ্তার, ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন রৌমারী ও চর রাজিবপুরের ২৫ গ্রামের মানুষ পানিবন্ধি ঝিনাইদহে ৪ দফা দাবী আদায়ে ম্যাটস শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ঝিনাইদহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ডিডি বিলকিস ও প্রশিক্ষক সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ অনিয়মের অভিযোগ প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয়ে এশিয়ে কাপে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুুতে মোবাইল অ্যাপস “নিরাময়” হাতের মুঠোই স্বাস্থ্যসেবা

বসির আহাম্মেদ ঝিনাইদহ সংবাদদাতা
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৩
  • ৬২ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুুতে নারীর স্বাস্থ্যসেবায় জনপ্রিয় হচ্ছে মোবাইল অ্যাপস “নিরাময়”। ইতোমধ্যে এই অ্যাপসের মাধ্যমে সেবা পাচ্ছেন নারীরা। স্মার্ট মোবাইল ফোনের প্লে স্টোর গিয়ে সহজেই ডাউনলোড করা যাচ্ছে অ্যাপটি। রেজিস্ট্রেশনের পর সেখানে নানা বিষয়ে সেবা গ্রহিতারা আবেদনের পর সহজেই পাচ্ছেন কাঙ্খিত সেবা। প্রসূতি কল্যান, শিশু কল্যন, রোগী কল্যান, মানসিক স্বাস্থ্য, সাপে কাটা, আত্মহত্যা ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধেসহ নানা বিষয়ে সেবা মিলছে এই অ্যাপসের মাধ্যমে। ঘরে বসে হাতের মুঠোই স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ায় খুশি সেবা প্রত্যাশীরা।
তাসলিমা খাতুন নামে এক নারী নিরাময়ের সেবা নিয়ে নিজের জীবনের গল্প বলছিলেন এই প্রতিনিধির কাছে। তিনি বলেন, ৮ম শ্রেনিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে দিয়া দিছে বাপ-মা। তখন আমার বয়স ছিলো মাত্র ১৫ বছর। বছর ঘুরতেই গর্ভবতী হয়ে পড়ি। পড়াশোনা বেশি করি নাই। আমি তখন কিছুই জানতাম না. বুঝতামও না। গ্রামের দাদি -নানিদের কাছে গর্ভকালীন করণীয় বিষয়ে ছুঁটে যাই পরামর্শের জন্য। কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা হাসপাতালে যাওয়া ছাড়াই খুব কষ্ট কইরা  নয়মাস কাটাইছি। পরে গর্ভের বাচ্চা প্রসবের সময় দেখা দিল জটিলতা। সেদিন ছিল শুক্রবার। সন্ধ্যাবেলা ব্যাথা শুরু হলো। আমার চিৎকার শুনে মা পাশের বাড়ি থেকে দাই আমেনা দাদিকে ডেকে আনলেন। দাদি হারিকেন জ্বালিয়ে আমার পাশে বসে থাকলেন। রাত নয়টার দিকে হঠাৎ রক্ত ভাঙা শুরু হলো। রক্তে বিছানা ভেসে যাচ্ছিল। তখন মনে হচ্ছিল আমি হয়ত মরেই যাব। আমেনা দাদি যখন জানালেন আমার অবস্থা ভালো না তখন বাপ-মা কোনোমতে একটি ভ্যানে কইরা আমাকে হাসপাতালে নিয়া যাই। সেইখানে আমার কোলজুড়ে আসে একটি ফুটফুটে সন্তান। তবে ডাক্তার ও বাপ-মা এবং আত্মীয় স্বজনরা বলতেছিল সন্তান নাকি অপুষ্ট হইছে। জন্মের পর বাচ্চাটার অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকত। একদিন শুনলাম জন্মের পরই নাকি বাচ্চাকে টিকা দিতে হয়। এরে-ওরে জিজ্ঞাসা কইরা বাচ্চারে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়া টিকা দিলাম। তারপর থেকে বাচ্চাটা আমার মাশাল্লা ভালোই আছে। একনাগাড়ে গর্ভকালীন সময়ে নিজের জীবনের কষ্টের কথাগুলো বলে চলেছিলেন ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু উপজেলার নিভৃত এক পল্লীর তাসলিমা খাতুন নামে এক নারী। তাঁর বয়স এখন ২৫। তিন সন্তান আর স্বামীকে নিয়ে এখন সুখেই চলছে তাঁর সংসার। নারীর স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে তাঁর এমন বক্তব্য শুনে জনগণের হাতের মুঠোই স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দিতে উদ্যোগ নেন ইউএনও সুস্মিতা সাহা। পরে তিনি তৈরি করেন স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাপস ‘নিরাময়’।
তাসলিমা জানান, তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলেটা গ্রামের স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। তাঁকে যখন স্কুলে দেন তখন জন্মসনদ প্রয়োজন হয়নি। এখন ছোট ছেলেটাকে ভর্তি করতে গেলে হেডমাষ্টার জন্ম নিবন্ধন নিয়ে যেতে বলেছেন।
তাসলিমা বলেন, এই জিনিস তো আমাগোরে লাগে নাই। পোলা মাইয়ারে স্কুলে দেওয়ার সময়ও লাগে নাই। পরে একদিন এক স্বাস্থ্য আপা আইসা আমার মোবাইলটা হাতে নিয়া ‘নিরাময় অ্যাপ’ না কী যেন একটা ডাউনলোড কইরা দিছে। সেইখানে নাকি রেজিস্ট্রেশনও করছে। কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সেটাও বুঝিয়ে দিয়ে গেছে। পরের দিনই বাড়িতে চৌকিদার আইসা পোলা আর আমাগোর নাম ঠিকানা নিয়া গেল। পরে ফোনে জানাইলো ইউনিয়ন কাউন্সিল থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়া যেতে। এখন আমি নিজেই ‘নিরাময়’ এর মাধ্যমে সেবা পাচ্ছি।
গল্পটা তাসলিমা নামের একজন নারীর জীবনের হলেও এই উপজেলার প্রেক্ষাপটে এটি চিরাচরিত গল্প। তাসলিমার মতো হাজারও নারী নিত্যদিন এমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। নারীদের এসব সমস্যা সমাধানে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চালু করা হয়েছে এই ‘নিরাময় অ্যাপ’। এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রসূতি কল্যান, শিশু কল্যান, রোগী কল্যান, নারী ও শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত, আত্মহত্যা ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ এবং সাপে কাটা রোগীদের বিষয়ে নানা করণীয় পরামর্শ ও সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এটি সাড়া ফেলেছে ভুক্তভোগী নারীদের মাঝে।

উপজেলা তথ্য ও যোগাযোগ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে ‘নিরাময় অ্যাপ’ চালু করা হয়েছে। স্মার্ট মোবাইলের প্লে স্টোর থেকে এ পর্যন্ত অ্যাপসটি ডাউনলোড করেছেন পাঁচ শতাধিক নারী। নিয়মিত সেবা নিচ্ছেন ৪৮৭জন প্রসূতি মা। এছাড়া এই অ্যাপসে ইপিআই টিকাগ্রহিতা এন্ট্রি হয়েছে ৭৩২জন। যাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের মাধ্যমে খুব সহজেই নিশ্চিত করা হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন সেবা। মানসিক কাউন্সিলিংয়ের জন্য এখানে আবেদন পড়েছে ৮টি।
উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার ওয়াশিকুর রহমান জানান, এই অ্যাপটি তৈরি করতে ২০২২ সালের ফেব্রয়ারি মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ফিল্ড ওয়ার্ক ও আর্কিটেকচারাল লেআউট ডিজাইন করা হয়। এরপর ওই ডিজাইন অনুসারে একই বছরের মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত মোবাইল অ্যাপস তৈরি করা হয়। ওই বছরের আগস্ট মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অ্যাপসটি পরীক্ষামূলক চালু করা হয়। একই সময়ে স্টেকহোল্ডারদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। পরে ওই বছরের অক্টোবর মাস থেকে পুরোপুরি চালু করা হয় ‘নিরাময় অ্যাপ’।

উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের সেবাগ্রহিতা নারী জরিনা খাতুন বলেন, আমি ২৮ সপ্তাহের গর্ভবতী। গর্ভধারণের শুরু থেকেই আমি আমার স্মার্ট ফোনে প্লে স্টোর থেকে ‘নিরাময় অ্যাপ’ ইন্সটল করে সেবা নিয়ে আসছি। আমাকে কখন কী করতে হবে। কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এসবই সপ্তাহ সপ্তাহ আমাকে বলে দেয় নিরাময়। নিরাময় অ্যাপস ব্যবহার করে আামি পুরোপরি সুস্থ আছি।

২ নং জোড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সৌরভ কুমার কুন্ডু জানান, আগে নতুন জন্ম নিবন্ধেনের জন্য বাচ্চাকে লোকেট করা খুবই কঠিন ছিলো। নিরাময়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকর্মীগণ ইইপআই টিকা গ্রহিতার তথ্য এন্ট্রি দেওয়ার সাথে সাথে আমরা সেটি দেখতে পাই এবং গ্রাম পুলিশের সহায়তায় দ্রুত জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করি।

ফলসী ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকর্মী শাহানা ইয়াসমিন জানান, যখন কোনো বাচ্চা টিকা নিতে আসে তখন সেটির তথ্য তাঁরা নিরাময়ে এন্ট্রি করে দেন।
নিলিমা রাণী কর্মকার নামে রঘুনাথপুর ইউনিয়নের পরিবার কল্যান সহকারী জানান, তাঁরা নারী ও শিশুর নানা বিষয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দেন। এ সময় তাঁরা ওইসব নারীদের স্মার্ট ফোনে নিরাময় অ্যাপস ডাউনলোড করে দেন। এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে তাঁদেরকে বুঝিয়ে দেন। এতে দ্রুত এবং সহজেই নিরাময়ের মাধ্যমে ঘরে বসে স্বাস্থ্যসেবা পান ওইসব মানুষ।

ইউএনও সুস্মিতা সাহা বলেন, একটি সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা মানুষের হাতের মুঠোই পৌছে দিতে চালু করা হয়েছে  স্বাস্থ্য বিষয়ক মোবাইল অ্যাপস ‘নিরাময়’। প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ সালের যে স্মার্ট বাংলাদেশের ভিষণ সেটির জন্য স্মার্ট গভর্ন্যান্সের একটি টুল হচ্ছে স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা ‘নিরাময়’। এটি এই উপজেলারে মানুষকে কেন্দ্র করে ডিজাইন করা হলেও পুরো বাংলাদেশেই এটি চালু করা সম্ভব। জন্ম নিবন্ধন থেকে শুরু করে মানসিক বিপর্যস্ততায় সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলিংসহ মানুষ যেন সবসময় ‘নিরাময়’কে কাছে পায় সে লক্ষ্যে আমরা জেলা প্রশাসকের তত্বাবধথানে কাজ করে যাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

ফেসবুকে আমরা

© স্বত্ব সংরক্ষিত © 2023 নিউজ বায়ান্ন ২৪

প্রযুক্তি সহায়তায় Shakil IT Park