মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সেখান থেকে ১০জনকে আটকও করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে ৩ শিশু। কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের পাহাড়ি জুগিটিলার বাজার-সংলগ্ন বাইশহালি টিলা এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি শুক্রবার বিকাল থেকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন, সোয়াট ও পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য ঘিরে রাখে। হঠাৎ করে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আনাগোনা ও বাড়তি সতর্ক পাহারায় পুরো এলাকাজুড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। শনিবার ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সিটিটিসি প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে সিটিআই বিভাগের একটি টিম সোয়াট ওই বাড়িতে ‘অপারেশন হিল সাইড’ পরিচালনা করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের ওই অভিযানে ৪ জন পুরুষ ও ৬ জন নারীকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের ৩ শিশুকে হেফাজতে নেয়া হয়। অভিযানে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সার্বিক সহায়তা প্রদান করে। ঘটনাস্থল থেকে ২.৫ কেজি বিস্ফোরক, ৫০টি ডেটোনেটর, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, জিহাদি বই, কমান্ডো বুটসহ অন্য প্রশিক্ষণ সরঞ্জামাদি, ছুরি-রামদাসহ ধারালো অস্ত্র এবং নগদ ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়।
পরে উদ্ধারকৃত বোমা ও ডেটোনেটর স্থানীয় আছসরাবাদ ফুটবল খেলার মাঠে ধ্বংস করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার (১২ আগস্ট ২০২৩ইং) দুপুরে জেলা পুলিশের প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। আটককৃতরা হলো- শরীফুল ইসলাম (৪০), পিতা-ওমর আলী, গ্রাম-দক্ষিণ নলতা, থানা ও জেলা-সাতক্ষীরা। হাফিজ উল্লাহ (২৫), পিতা-আবুল কাশেম, গ্রাম-কানলা, থানা-ইটনা, জেলা-কিশোরগঞ্জ। খায়রুল ইসলাম (২২), পিতা-নজরুল ইসলাম, গ্রাম-রসুলপুর, থানা-ফতুল্লা, জেলা-নারায়ণগঞ্জ। রাফিউল ইসলাম (২২), পিতা-সাইফুল ইসলাম, গ্রাম-মাইজবাড়ী, থানা-কাজীপুর, জেলা-সিরাজগঞ্জ। মেঘনা (১৭), স্বামী-খায়রুল ইসলাম, গ্রাম-রসুলপুর, থানা-ফতুল্লা, জেলা-নারায়ণগঞ্জ। আবিদা (১২ মাস), পিতা-খায়রুল ইসলাম, মাতা-মেঘনা, গ্রাম-রসুলপুর, থানা-ফতুল্লা, জেলা-নারায়ণগঞ্জ। শাপলা বেগম (২২), পিতা-মজনু মল্লিক, গ্রাম-শ্রীপুর, থানা-আটঘরিয়া, জেলা-পাবনা। জুবেদা (১৮ মাস), পিতা-আ. ছত্তার, মাতা-শাপলা বেগম, গ্রাম-শ্রীপুর, থানা-আটঘরিয়া, জেলা-পাবনা। হুজাইফা (৬), পিতা-আ. ছত্তার, মাতা-শাপলা বেগম, গ্রাম-শ্রীপুর, থানা-আটঘরিয়া, জেলা-পাবনা। মাইশা ইসলাম (২০), পিতা-সাইদুল ইসলাম, স্বামী- সোহেল তানজীম রানা, গ্রাম-চাঁদপুর, থানা ও জেলা-নাটোর। মোছা. সানজিদা খাতুন (১৮), পিতা-আব্দুল জলিল, স্বামী-সুমন মিয়া, গ্রাম-নিজবলাই, থানা-শরিয়াকান্দি, জেলা-বগুড়া। আমিনা বেগম (৪০), পিতা-জলমত খাঁ, স্বামী-শফিকুল ইসলাম, গ্রাম-দক্ষিণ নলতা, থানা-তালা, জেলা-সাতক্ষীরা। মোছা. হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০), পিতা-শফিকুল, মাতা-আমিনা বেগম, গ্রাম-দক্ষিণ নলতা, থানা-তালা, জেলা-সাতক্ষীরা।
শনিবার ১২ আগস্ট ২০২৩ইং, সকালে ‘অপারেশন হিল সাইড’ অভিযান শেষে পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, কুলাউড়ার জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে শিশুসহ আটক ১৩ জনের বাড়ি দেশের বিভিন্ন এলাকায়। তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠন ব্যাপক সংখ্যক লোকদের উগ্রবাদের দীক্ষা দিচ্ছে। সেসব লোকজন হিজরতের জন্য ঘর থেকেও বের হয়েছেন। শুরুতে আমাদের কাছে তথ্য ছিল মৌলভীবাজারের যেকোনো একটি পাহাড়ে তারা তাদের আস্তানাটি তৈরি করেছে। বৃহস্পতিবার আমরা চূড়ান্ত তথ্য পাই। তিনি বলেন, ঢাকায় আমরা একজনকে গ্রেপ্তার করেছি যিনি এই জঙ্গি আস্তানা থেকে তার পরিবারকে আনার জন্য গিয়েছিলেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি নতুন একটি সংগঠন, এর নাম ‘ইমাম মাহমুদ কাফেলা’।
বাংলাদেশে যেসব নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আছে সেগুলোর বাইরে এটি একটি নতুন সংগঠন। এই সংগঠনের যে মূল ব্যক্তি তার নামও আমরা পেয়েছি। আশা করি, তার পর্যন্ত পৌঁছাতে আমরা সক্ষম হবো। প্রেস বিফিংয়ের সময় মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মহসীন, কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস ছালেকসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এলাকাবাসী জানান, অভিযানে আটককৃতরা ২ মাস আগে ওখানে কাতার প্রবাসী রশিদ আলীর কাছ থেকে ৩০ শতাংশ জায়গা ক্রয় করেন। ওই টিলার গাছপালা কেটে ৩টি টিনশেড বসতঘর তৈরি করেন তারা। ওখানে প্রথমে দুটি পরিবার আসলেও পরে আরও দুই-তিনটি পরিবার আসে। ওই এলাকায় এরা নতুন আসায় তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ হয়নি স্থানীয় বাসিন্দাদের। তবে প্রতিবেশীরা বলছেন, তাদের কাছে ওরা বলেছেন নদীভাঙনে তাদের ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ায় তারা ওখানে এসেছেন। এরা স্বাভাবিক চলাফেরা করতো এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গেও মিশতো। পাহাড়ি টিলাবেষ্টিত ওই এলাকাটিও ঘন বসতিপূর্ণ অনেকটাই।
Leave a Reply