ঝিনাইদহ জেলা জুড়ে ব্যাপকভাবে জন্মাচ্ছে ক্ষতিকারক উদ্ভিদ পার্থেনিয়াম। যা মানব দেহ, ফসল এমনকি গবাদি পশুর জন্যও অত্যান্ত ক্ষতিকারক। পথের ধারে, বাড়ির আঙ্গিনায় ও ফসলের মাঠে জন্মানো এই আগাছার অপকারীতা কতটা তাও জানা নেই সাধারন মানুষের। তবে কৃষি কর্মকর্তা বলছেন ক্ষতিকারক উদ্ভিদ পার্থেনিয়াম সম্পর্কে মানুষকে সচেতন ও নিধনে নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা।
অজানা বিষাক্ত এই উদ্ভিদের নাম পার্থেনিয়াম। রাস্তার ধারে, বাড়ির আঙ্গিনা ও ফসলের মাঠে ব্যাপকভাবে জন্মাচ্ছে। ক্ষতিকারক উদ্ভিদটির সাধারনত উচ্চতায় ১ থেকে দেড় মিটার পর্যন্ত হয়। পার্থেনিয়ামের একটি গাছ ২০ থেকে ২৫ হাজার বীজের জন্ম দেয় ফলে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক বছর আগেও এ উদ্ভিদের কম দেখা গেলেও এখন জেলার প্রায় সব জায়গায় গেলেই দেখা যায়। তবে অজানা এ আগাছার নাম কিংবা তা থেকে কি ক্ষতি হয় তা সাধারন মানুষের জানা নেই। পার্থেনিয়াম আগাছা ফসলি জমিতে থাকলে ফসলের ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। উদ্ভিদের পাশাপাশি প্রাণী জগতেও মারাত্মক ক্ষতি করে। পার্থেনিয়াম আগাছাযুক্ত গবাদি পশু চরানো হলে পশুর শরীর ফুলা, জ্বর, বদ হজমসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এ আগাছার স্পর্শে আসলে মানব দেহেও হাপানি, এজমা, ক্যান্সার, চর্মসহ বিভিন্ন রোগের সম্ভাবনা থাকে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ডঃ মোঃ রেজওয়ানুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর আগের তুলনায় এখন জেলা জুড়ে ব্যপকভাবে জন্মেছে এই উদ্ভিদ। এছাড়াও এই বিশেষজ্ঞ পার্থেনিয়ামের ক্ষতির দিক ও নিরাময়ের নানা পরামর্শ দিলেন। তিনি আরও জানান, পার্থেনিয়াম ফুলগুলি বাতাসের সাথে ভাসতে থাকে এবং অনেক দূরে ছঢ়িয়ে যেতে পারে।পার্থেনিয়াম বিচের সাথে এক ধরণের উইং থাকে যা অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। আর কোন মাধ্যম লাগেনা এটি আমাদের জন্য তো বটেই গবাদি পশু জন্য মারাত্মক ঝুকি। তাই আগাছাযুক্ত জায়গায় গবাদি পশু চরানো হলে পশুর নাকের ভিতরে গিয়ে শরীর ফুলা, শ্বাসকষ্ট , জ্বর, বদ হজমসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ আগাছার স্পর্শে মানুষ আসলেও মানব দেহেও শ্বাসকষ্ট, হাপানি, এজমা, ক্যান্সার, চর্মসহ বিভিন্ন রোগের সম্ভাবনা থাকে। পার্থেনিয়াম বাতাসে এ বিষাক্ত গাছ দুই ভাবে ধ্বংস করা যায় এক ফিজিক্যালি কন্ট্রোল অথবা কেমিক্যালি কন্ট্রোল। কেমিক্যালি কন্ট্রোল করতে গেলে বিভিন্ন সাইড ইফেক্ট হতে পারে। তাই ফিজিক্যালি কন্ট্রোল করাই ভালো। আর ফিজিক্যালি কন্ট্রোল করতে হলে ফুল আসার আগেই গাছ কেটে শুকায়ে আগুন ধরিয়ে ধ্বংস করতে হবে। তা না হলে একটি গাছ থেকে প্রায় ১০ লক্ষ গাছ জন্ম নিবে।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী জানালেন, ক্ষতিকারক আগাছা সম্পর্কে কৃষক ও সাধারন মানুষকে সচেতন করতে নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পার্থেনিয়াম রাস্তার ধারে, বাড়ির আঙ্গিনা ও ফসলের মাঠে ব্যাপকভাবে জন্মাচ্ছে। তাই এগুলো তুলে ফেলে মাটি চাপা দিয়ে অথবা আগুনে পুড়িয়ে ফেলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ঝিনাইদহ জেলায় প্রায় ৫০ হেক্টর আবাদী জমিতে পার্থেনিয়াম নামক উদ্ভিদ জন্ম নিয়েছে।
Leave a Reply