ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মৌলভীবাজার জেলায় এ পর্যন্ত ৩৩ জন পাওয়া গেছে। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এবং বাসাবাড়িতে থেকে তারা চিকিৎসা নিয়েছেন । এই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর বেশির ভাগই ঢাকায় অবস্থানকারী অথবা সম্প্রতি তাঁরা ঢাকা থেকে এসেছেন। তবে দুজন রোগীর ঢাকা ভ্রমণের ইতিহাস পাওয়া যায়নি। তাঁরা স্থানীয় পর্যায়েই কোনোভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই সুস্থ হয়ে গেছেন।
বৃহস্পতিবার ০৩ আগস্ট ২০২৩ইং, দুপুর পর্যন্ত মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আটজন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাঁদের ডেঙ্গু চিকিৎসার নির্দিষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে দুপুরে দেখা যায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ঘোষিত ডেঙ্গু ইউনিটে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। শয্যায় টানানো মশারির ভেতর কোনো কোনো রোগী ঘুমিয়ে আছেন, আবার কেউ স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ডেঙ্গু রোগীদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুরের বাসিন্দা শাহরিয়ার মনতাহা। তিনি বলেন, গত ২৭ জুলাই ঢাকায় তাঁর জ্বর হয়। এরপর ঢাকাতেই পরীক্ষায় তাঁর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে বাড়ি আসার পর গতকাল বুধবার মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তিনি ভর্তি হয়েছেন।
ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন।
কমলগঞ্জের বড়গাছের বাসিন্দা রমজান আলী। তিনি অসুস্থ হয়ে বাড়ি আসেন। পরে গত মঙ্গলবার তিনি মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছেন। তিনি মশারির বাইরে বসে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এখন তিনি অনেকটাই ভালো বলে জানান।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত এ হাসপাতালে ১৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন জুন মাসে ভর্তি হয়েছিলেন। বাকি ১৮ জন জুলাই ও আগস্ট মাসে ভর্তি হয়েছেন। এই ১৯ জনের মধ্যে একজন ছিলেন চট্টগ্রামফেরত, অন্য ১৮ জন ঢাকাফেরত।
হাসপাতালে আলাদা ইউনিটে ডেঙ্গু কর্নার খোলা হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক বিনেন্দু ভৌমিক। তিনি বলেন, এখন ১৫ শয্যার কর্নারে রোগীর চিকিৎসা চলছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৩০ শয্যার প্রস্তুতি রাখা আছে।
রোগী বৃদ্ধি পেলে এই ডেঙ্গু কর্নারকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হবে। এখন পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি হননি। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগী ছাড়াও জ্বর নিয়ে আসা রোগীরাও সরকার নির্ধারিত ৫০ টাকা ফি দিয়ে হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করছেন। প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০ জন রোগী ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাচ্ছেন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আজ দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে দুজন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে আটজন ডেঙ্গু রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁদের মধ্যে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন পাঁচজন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন, রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ও কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন রয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলায় মোট ৩৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৪ জন এবং বাসাবাড়িতে থেকে পারিবারিকভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯ জন। আক্রান্তদের ২৫ জন সুস্থ হয়েছেন। ৩৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে দুজনের ঢাকা ভ্রমণের ইতিহাস নেই। তাঁদের একজন বড়লেখার একটি খাসিয়াপুঞ্জির বাসিন্দা, অন্যজন শ্রীমঙ্গলের। এ দুজনও সুস্থ হয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক রত্নদীপ বিশ্বাস বলেন, খাসিয়াপুঞ্জির যে লোকটি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি সম্প্রতি ঢাকা যাননি। তবে তাঁর প্রতিবেশী ওই পুঞ্জির আটজন ঢাকা গিয়েছিলেন। এই আটজন ঢাকা থেকে ফেরার পরই তাঁর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। কিন্তু ঢাকাফেরত আটজনসহ পুঞ্জির আর কারও জ্বর বা ডেঙ্গু হয়নি।
জেলা সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসার যে গাইডলাইন দেওয়া আছে, সে অনুযায়ী, আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি। চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমাদের সব প্রস্তুতি আছে। পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত আছে। আক্রান্তের বেশির ভাগই ঢাকাফেরত।
এদিকে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে মৌলভীবাজার পৌর এলাকায় পৌর কর্তৃপক্ষ ওষুধ ছিটাচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, এডিসের লার্ভা ধ্বংসের অভিযান চলছে। ধারাবাহিকভাবে শহরের বিভিন্ন স্থানে স্প্রে করা হচ্ছে। ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার করা হচ্ছে। মেয়র জানিয়েছেন, আজ মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণ, মৌলভীবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ এবং মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ছাত্রাবাস এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম বলেন, জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সব দপ্তরের কর্মকর্তারা থাকেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে তাঁদের বলে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের নিজ নিজ অফিস প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করতে, পানি পরিষ্কার রাখতে। লার্ভা ধ্বংসে পৌরসভা স্প্রে করছে। এ ছাড়া সদর হাসপাতালে ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু চিকিৎসার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হচ্ছে। সচেতনতা সৃষ্টিতে চালানো হচ্ছে প্রচার তিনি জানান।
Leave a Reply